Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

খাদ্য উৎপাদন

 

 

মৎস্য চাষঃ দারিদ্র বিমোচন, বেকার সমস্যা সমাধান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম দাবিদার মৎস্য চাষ। সখের বশত মৎস্য চাষ সর্বপ্রথম বরইতলীতে ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা হতে ২৫০ বড় নাইলেটিকা মাছ এন প্রাকৃতিক ভাবে জর্দাঘোনায় দুই একর জমিতে পোনা উৎপাদনের কাজ শুরু করেছিলেন। তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য জনাব এ.এইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। সেই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত পোনা রসুলাবাদেরজনাবহাশেম উদ্দিন, উত্তর বরইতলীর জনাব জাহাঙ্গীর সাহেব সহ অনেকে কিনে নিয়ে মাছ চাষের প্রসার শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে ১৯৮৭ সালে হতে বাণণীর্জকভাবে সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করা হলে ও ১৯৯০ দশকে এরব্যাপক প্রসার ঘটে এবং ২০০০ সালের পর আধা-আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের এক বিপ্লব সংঘটিত হয় বরইতলীতে। অনুসন্ধানে জানা যায় বর্তমানে বরইতলী এবং নিকটবর্তী এলাকায় প্রায় ২৩১ একর জমিতে আধা-আধুনিক পদ্ধতিতে মিক্সার চাষ হচ্ছে।  এই মাছ চাষের সাথে সম্পৃক্ত মনোসেক্স হ্যাচারীতে ও পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছে। একই সাথে চার ব্যবসায়ীর মালিকানাধীনে ফিশ-ফিড ব্যবসা পুরোদমে চলছে। সব ব্যবসা মিলে বছরে প্রায় এক কোটি ৭৩ (তিয়াত্তর) লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে ৫০০ জন শ্রমিক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে ফিশ-ফিডের চাহিদা বেশি হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের দৃষ্টির আড়ালে খাবারের দাম বৃদ্ধি করেছে কোম্পনীরা যা মোট উৎপাদন খরচের ৬৫% । তাছাড়া ঐ ফিশ-ফিড কোম্পানী তাদের খাবারের গুণগত মান ও কমিয়য়েছে বলে মাছ চাষীদের অীভযোগ রয়েছে। মাছ চাষীদের সাথে আলাপে জানা যাযা অধিকাংশ চাষীর কোন ট্রেনিং নেই। উপজেলা মৎস কর্মকর্তা কয়েকবার সেমিনারের মাধ্যমে কিছু পরমর্শ দিলেও তা কৃষকদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। কৃষি কর্মকর্তা মাছাচাষীদের বাস্তবতা অনুসারে পরামর্শ দিতে অক্ষম বলে ও অনেকের ধারনা। তাছাড়া সম্প্রতি তেলাপিয়া মাছের এক ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়েছে যেটিতে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকায় মাছ মরে যাচ্ছে। চাষীদের ধারনা আবহাওয়া বদল হওয়ার সময় কিংবা পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী এর বেশি হলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। ব্যাপক চেষ্টা সত্বেও এ রোগের চিকিৎৎসা এখনো চাষীদের অজানা রয়েছে। তাছাড়া বর্ষার সময় সোনাইছড়ি খালের ভাঙ্গন, পাহাড়ী ঢল, মাতামুহুরী নদীর পানি বন্যার সময় উজানে আসা, স্থানীয় কিচু দুষ্কৃতিকারী কৃর্তক পুকুরে বিষ প্রয়োগ, আধুনিক কলাকৌশল ও প্রযুক্তির অভাব। এসক কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি গুনতে হচ্ছে বলে মাছ চাষীদের অভিমত। এতদসত্ত্বেও বর্তমানে জনাব এ.এইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ, জনাব হাশেম উদ্দিন, জনাব ছালেকুজ্জামান, জনাব আনছারুল ইসলাম, জনাব আফছারুজ্জামান, জনাব শাহীন মুরাদ, জনাব নুরুল কবির চৌধুরী, জনাব ছদরুল আমিন চৌধুরী, জনাব লুৎফুর রহমান, জনাব এনামুল হক, জনাব নাসির উদ্দিন, জনাব মো: আবু তালেব, জনাব মঈনুল ইসলাম, জনাব সাইফুল ইসলাম, জনাব এমরানুলহক, জনাব নজরুল ইসলাম, জনাব নেজামুল ইসলাম, জনাব মওলানা খলিল উদ্দিনসহ প্রায় চল্লিশজন মাছচাষী বরইতলীতে মাছের ব্যবসা চালাচ্ছেন। চকরিয়ার মিঠা পানির মাছের মোট চাহিদার ৬৫% বরইতলীর উৎপাদিত মাছ দ্বারা পূরণ হচ্ছে বলে চাষীদের অভিমত।

 

 

মৎস্য চাষের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রাপ্ত পুরষ্কার সমূহ:

১। উপজেলা মৎস্য পুরষ্কার, ১৯৮৮ সাল।

২। মাছের গুণগতমানের পোনা উৎপাদন এ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ

৩। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জাতীয় মৎস্য পুরষ্কার ২০০৯ সাল।

৪। কার্প-গলদা মিশ্র চাষে জেলায় সর্বোচ্চ পরিমান মাছ উৎপাদন করিয়া মৎস্য সমপদ উন্নয়নে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য জেলা প্রশাসক কর্তৃক ‘‘মৎস্য সপ্তাহ-৯৭ পুরষ্কার’’

 

সুপারিশঃ ১। বর্তমানে মাছ চাষের জন্য সরকারি কোন ব্যাংক লোন নাই। তাই পূঁজি সরবরাহের জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংক লোন দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

২। আধুনিক পদ্ধতিতে পোনা, সার, মাছের খাবার এবং পদ্ধতি পর্যাপ্ত সরবরাহ করা উচিত।

৩। আধুনিক পদ্ধতিতে বন্যার সময় হবঃরহম এর মাধ্যমে মাছ চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, প্রযুক্তি ও উপকরণ সরবরাহ করা উচিত।

৪। প্রান্তিক চাষীদের স্থানীয় ও সরারিভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

৫। খাদ্যের দামে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন যাতে খাদ্যের দাম ও গুণগত মান গ্রহনীয় মাত্রায় থাকে।

৬। মাছ চাষে পানি ও মাটি নির্বাচনে উপযোগী টৈকনিক্যাল সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

৭। রাষ্ট্রীয় আইন ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ বন্ধ করা প্রয়োজন।

৮। মৎস্য তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রকে আধুনিকীকরণ ও তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

৯। ঝঃড়পশরহম মাছের পোনা ক্রয় করে আনার পর সরাসরি বড় পুকুরে না দিয়ে আলাদাভাবে নার্সারী পুকুরে রেখে ৫/৬ মাস যত্ন নেয়া উচিত। মাছের মৎড়tঃয আসলে তারপর বড় পুকুরে দেয়া উচিত।

 

মাছ চাষের বর্ষপঞ্জী

১। বৈশাখ (এপ্রিল-মে)ঃ-এ সময়টাতে কার্পজাতীয় মাছ ডিম পাড়ে। এ কারণে রেনু চাষীদের জন্য এ সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। রেনু চাষের জন্য আতুঁর পুকুর বা নার্সারী পুকুর তৈরীর উপযুক্ত সময়। ভালভাবে শুকানো, অতিরিক্ত কাঁদা অপসারণ তলদেশ পরিচর্যার এখনই সময়। চুন, গোবর, এবং সার প্রয়োগ করে পুকুরে পানি সরবরাহ করে পানিতে প্রাকৃতিক খাবার জন্মাতে হবে। গত বছরের বড় চারা আকারে পোনা ছাড়ার জন্য মজুদ পুকুর ও পরিচর্যা করা নিতে পারে।

২। জৈষ্ঠ্য (মে-জুন) গত মাসে আতুঁর পুকুরে ছাড়া রেনু পোনা ইতিমধ্যে ধানী পোনায় রূপান্তরিত হয়েছে। চারা পোনার জন্য গত মাসে তৈরী করে রাখা চারা পুকুরে এ মাসে ধানী পোনা মজুদ করতে হবে।

৩। আষাঢ় (জুন-জুলাই) যারা মজুদ পুকুরে গত বছরের ছোট নলা মাছ রেখেছে তারা এখন ঠিকভাবে খাবার দিতে পারে এবং যাদের কাছে বড় মাছ আছে তারা এ সময়ে বাজারে মাছ বিক্রি করলে ভাল বাজার দাম পাবে। ধানী পোনা সংগ্রহ করে চারা পুকুরে মজুদ করতে পারবে।

৪। শ্রাবণ (জুলাই-আগষ্ট) চারা পুকুরে জৈষ্ঠ্য মাসে ছাড়া পোনা ৩ইঞ্চি-৪ইঞ্চি হয়ে থাকলে এ সময়ে তা মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করা দরকার। পূর্বের মজুদ পুকুরে রাখা মাছ বিক্রি করে দেয়া আবশ্যক। মজুদ পুকুরের জন্য আদুল পোনা না থাকলে তা সংগ্রহ করে এখনি মজুদ করা দরকার।

 

৫। ভাদ্র (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর) মজুদ পুকুরে এখন নিয়মিত খাবার দিতে হবে। মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা আবশ্যাক। পুকুরের পানির পি এইচ মেপে প্রয়োজনে চুন দেয়া যেতে পারে।

৬। আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) পুকুরে জলজ আগাছা জন্মালে তা তুলে নিতে হবে। পানিতে প্রাকৃতিক খাবারের ঘাটতি হলে সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। মাছের খাদ্য প্রদান ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষন করতে হবে।

৭। কার্তিক: (অক্টোবর-নভেম্বর) মাঝে মাঝে হররা টেনে দেয়া আবশ্যাক। এ মাসের শেষের দিকে শীত পড়বে। পুকুরের পানি শোধন এবং প্রতিরোধ হিসেবে পুকুরের প্রতি শতাংশ আধা কেজি চুন প্রয়োগ করা হলে মাছের জন্য ভাল হবে।

৮। অগ্রহায়ন: (নভেম্বর-ডিসেম্বর) এ মাসের সারের ব্যবহার কমানো উচিত। অজৈব সার পরিমিত ব্যবহার করা যেতে পারে। অধিক ঘনত্বের মাছ কিছু সংখ্যক তুলে ফেলতে হবে।

৯। পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারী) মাছ খুব কম খাবে। পুকুরের সার প্রয়োগে সচেতন হতে হবে। মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। পুকুরে গ্যাস হতে পারে হররা টানা দরকার।

১০। মাঘ (জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী) নিয়মিত হররা টানতে হবে। প্রতি শতাংশে আধা কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।

১১। ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী-মার্চ) মাছ আবার খেতে শুরু করবে। পুকুরে হররা টানা ছাড়াও চুন প্রয়োগ করতে হবে। পানির পরিমান বেশি কমে গেলে পানি বাড়াতে হবে।

১২। চৈত্র (মার্চ-এপ্রিল): নতুন নার্সারী পুকুর বা চারা পুকুর তৈরি শুরু করলে তা এমাসেই শেষ করতে হবে।

 

ধান চাষঃ